সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১
এএসএম জসিম, পাথরঘাটা (বরগুনা)।।
বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত সকল মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননের জন্য ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য উপকুলের জেলেদের সাগরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। এ নিয়ে সংকার মধ্যে পরেছে জেলেরা। এক দিকে করোনার মহামারী ও অপর দিকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারনে দক্ষিনাঞ্চলের জেলেদের অনেক কস্ট হলেও সঠিক ভাবে পালন করেছে। বর্তমানে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরন কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটসহ অন্যান্য ঘাটে জেলেদের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ৬৫ দিন পরে শুরু হবে জেলেদের কাঙ্খিত ইলিশ মাছ শিকার। আর বঙ্গোপসাগরে মাছধরার সেই চিরায়ত দৃশ্য পাথরঘাটার জেলে পল্লীগুলোতেও দেখা যাবে। এই অবরোধ শেষ হতেই গভীর সমুদ্রে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ, এই নিম্নচাপ শেষ না হলে জেলেরা সাগরে যেতে পারবে না। আবার অনেকে ইতমধ্যে যাত্রা শুরু করলেও তাদের মধ্যে অনেকে উপকুলে ফিরেছে আবার অনেকে জীবন বাজী রেখে সাগরে গেছে।
ছোট পাথরঘাটা এলাকার জেলে মনির, বিএডিসি ঘাটের জেলে ইলিয়াস, কালামসহ একাধীক জেলেরা জানান, একদিকে করোনা মহামারী অন্য দিকে সাগরে কম মাছ পাওয়ায় জেলে পরিবার গুলোতে হাহাকার শুরু হয়েগেছে। এর মধ্যে গতবছর সাগের মাছ কম ধরা পরেছে। মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিতে নিতে এখন তারাও নিশ্ব হয়ে গেছে। এ অবরধের আগে যখর সাগরে যায় তখন মনে হয়েছে মাছের মধ্যে করোনা শুরু হয়েছে, কারন সাগরে মাছ নেই বললেই চলে। এখন আবার শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। সবাই মাছ শিকার করতে গেলেও তাদের মধ্যে অনেকে উপকুলে ফিরে এসেছেন। এভাবে চলতে থাকলে তাদের ভিক্ষা করা ছারা কোন উপায় নেই।
আল্লাহর দান ১, ২ ও ৩ ট্রলারের মালিক মো. আবুল হোসেন ফরাজী জানান, জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের সময় থেকে শুরু হয় ইলিশ আহরনের মওসুম চলে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে ৬৫ দিনের মাছ শিকারের সরকারী নিশেধাজ্ঞাও শেষে হয়েছে। এই নিশেধাজ্ঞা কোন ভাবে পার করে গেলেও সাগরে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ। তার ৩টি ট্রলার রয়েছে এর প্রত্যেকটি ট্রলারে জন্য তার ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার বাজার করতে হবে। এর আগে একেতো সাগরে জালে ইলিশ ধরা পরেনি। অন্য দিকে যে পরিমান টাকা এর পিছনে ব্যায় করছেন তাতে এ নিশেধাজ্ঞার পরে যদি ইলিশ না পাওয়া যায় তাবে তিনিসহ তার মতো অন্য ট্রলার মালিকদের এলাকা ছেরে পালিয়ে যাওয়া ছারা উপায়নেই বলে জানিয়েছেন। এখন আবার সাগরে শুরু হয়ে গেছে নি¤œচাপ। এখন পথে বসে যাওয়া ছারা কোন উপায় নেই। সরকারী ভাবে যদি কোন সহায়তা তাদের না করা হয় তবে এ মৎস্য শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেও তিনি ধারনা করছেন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, হঠাৎ এই নিম্নচাপের কারনে যারা সাগরে গিয়েছিল তারা অনেকেই ফিরে এসেছেন। যারা সাগরে গেছে তাদের দাবি আর কতো দিন মানুষের কাছ থেকে দার ও দাদন নিয়ে খাবো! হয় ইলিশ শিকার করে নিয়ে আসবো না হয় মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে আমাদেরকে জানান।
তিনি আবো জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই আমরা এর বিরোধিতা করেছি এবং বিবেচনা সাপেক্ষে অবরোধের সময় পরিবর্তন করার কথা জানিয়ে আসছি মৎস্য মন্ত্রনালয়কে। এ অবরোধের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছি, কিন্তু ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকলে উপকূলের জেলেরা নিঃস্ব হয়ে যাবে। তার পরেও সরকারী আইন মেনে চলতে হবে তাই জেলেরাও মেনে চলছে। তাছারা সরকারী যে সহায়তা দেয় তাতে কিছুই হয়না আমার জেলেদের। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যাতে অবরোধের সময়টি পূর্ণবিবেচনায় রাখে এবং পাশ্ববতী দেশ ভারতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেয়া হয়।